পূবের বাড়ীর ঠাকুর

নারায়ণ ঠাকুর হইতে ৪র্থ পুরুষ ৺রমাবল্লভ ঠাকুর ও তাঁহার ধরার পরিচয়।
(ইঁহার পুত্র হইতে ইঁহারা পূবের বাড়ীর ঠাকুর বলিয়া অভিহিত।)

  1. রমাবল্লভ ঠাকুর

  2. ইনি চন্দ্রশেখর ন্যায়বাচস্পতির জ্যেষ্ঠ পুত্র। ইঁহার অকালে তিরোধান হওয়ায় উল্লেখযোগ্য বিশেষ কোন কার্য্যের নিদর্শন মিলে না, তবে ইনি অত্যন্ত স্বজনপ্রেমিক ও কুটুম্ববৎসল ছিলেন। সাত্বিকতা ও আচারনিষ্ঠা পিতৃপৈতামহিক ছিল। কোটালীপাড়ার শুনক হরিদেব তর্কবাগীশকে কন্যা সম্প্রদান করিয়া ভাটপাড়ায় বাস করান। মধ্যকালে (বাং ১২৫০ সালে) ঐ শুনকবংশ বৃদ্ধি পাইলে তাঁহাদের বাস্তুস্থান তর্কবাগীশপাড়া নামে খ্যাত হয়। রমাবল্লভের জামাতৃসূত্র অনুসরণে এখনও পূবের বাড়ীদের সন্ধিপূজার দ্রব্য শুনকবংশে অর্পিত হইয়া আসিতেছে।
  3. বাণেশ্বর পঞ্চানন

  4. ইনি রমাবল্লভের জ্যেষ্ঠ পুত্র ইনি পিতৃব্য বীরেশ্বর ন্যায়ালঙ্কারের নিকট হইতে সম্পত্তি প্রাপ্ত হন। (ইঁহার বিবরণ বীরেশ্বর ন্যায়ালঙ্কার প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য।) ইঁহারা স্ত্রী-পুরুষে যে দুটী মন্দিরে শিবলিঙ্গদ্বয় স্থাপনা করেন, (বাঙ্গালা ১১৪৪) এখনও তাহা ভাঙ্গাবাঁধা ঘাটের উপর অক্ষুণ্ণ অবস্থায় পূজিত হইতেছেন বালান্ডা পরগণায় কাশীপুর গ্রামে তাঁহার কৃত দীর্ঘিকা অনেকের জীবন রক্ষা করিতেছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট প্রাপ্ত ভূসম্পত্তির মধ্যে আনরপুর, কুশদহ ও বালান্ডা পরগণায় ভাস্-লা, ডেওপুল, বরুণাবেড়ে প্রভৃতি গ্রামের অন্যূন তিনশত বিঘা নিষ্কর ব্রহ্মত্রা ভূমি এবং তাঁহার স্বপার্জিত পীঠ পুক্-রিয়া তালুক এখনও তাঁহার বংশধরেরা ভোগ করিতেছেন। ঐ তালুকের ভূমির পরিমাণ প্রায় ১০০০ বিঘা। পঞ্চানন ঠাকুর বলিয়াই ইনি খ্যাত ছিলেন। ইনি যে বাণলিঙ্গ ও রঘুনাথ শালগ্রামশিলা নিত্য সেবা করিতেন, তাহা (শ্রীকমলকৃষ্ণ স্মৃতিতীর্থের) গৃহে পূজিত হইতেছেন।

  5. রাধাকান্ত ঠাকুর

  6. ইনি রমাবল্লভের কনিষ্ঠ পুত্র। নিজে অপুত্রক থাকায় সাবর্ণ গোত্রীয় জামাতা হরিদেব ভট্টাচার্য্যকে সামন্তসার হইতে আনাইয়া ছিলেন। এখনও সাবর্ণ হরিদেবের বংশধরেরা রাধাকান্ত ঠাকুরের বাস্তুতে থাকিয়া তাঁহার নাম রক্ষা করিতেছেন।
  7. রামদুলাল তর্কবাগীশ

  8. ইনি বাণেশ্বরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ন্যায়শাস্ত্রে সুপণ্ডিত এবং সাত্বিক ও বেশ ক্রিয়াবান্‌ ছিলেন। মাজনামুটার রাজা যাদবরাম চৌধুরীর নিকট বাং ১১৬২ সালে যে দেরোপরগণায় ভূসম্পত্তি প্রাপ্ত হন, বর্ত্তমানে তাঁহার বংশবরেরা সেই ভূমির অবশিষ্ট ৯৬ ব্ঘিা বাগাখোলাচক ও ২০০ বিঘা বিশ্বনাথচক নামক সম্পত্তি ভোগ করিতেছেন।
  9. রামকান্ত সার্ব্বভৌম

  10. ইনি বাণেশ্বরের মধ্যম পুত্র। অত্যন্ত ভাগ্যবান্ পুরুষ। দায়, প্রতিগ্রহ ও ক্রয়, এই তিন সম্বন্ধ সূত্রে ইনি প্রায় ৫০০০ (পাঁচ হাজার) বিঘা ব্রহ্মত্র প্রভৃতি ভূমির মালিক ও প্রায় দুই হাজার ব্রাহ্মণ গৃহস্থের দীক্ষাগুরু হইয়াছিলেন। তন্মধ্যে রাজা যাদবরাম চৌধুরীর নিকট দোরো পরগণায় বে দুই হাজার বিঘা ভূমি প্রাপ্ত হন, তাহা পরে তাঁহাদের পৌত্রদের নামানুসারে বাহালী হইলেও বংশধরদিগের দুরদৃষ্টবশে এক্ষণে তন্মধ্যে রামজীবনচক্‌ ও কালীপ্রসাদচক্ সমুদ্র গ্রাস করিয়াছেন। ইনি সুকবি ছিলেন। মহাকাব্য নানা অলঙ্কারে ভূষিত হইয়া ইঁহার রচিত ‘রামলীলোদয়’ মহাকাব্য নৈষধের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করিতেছে। গ্রন্থখানি এখনও মুদ্রিত হয় নাই। ইনি ১১৭৪ সালে মন্বন্তরের সময় স্বীয় বাস্তুর নিকটে একটি নবরত্ন ও একটি পঞ্চরত্ন, এই মন্দিরদ্বয় নির্মাণ করাইয়া তাহাতে ১১৮০ সালে স্ত্রী পুরুষে দুইটী শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। এখনকার মন্দিরসম্মুখ নামক স্থানে উহা এখনও বর্ত্তমান। ভাটপাড়ার পূর্ব্বপার্শ্বে মাদ্রাল গ্রামে তাঁহার কৃত প্রকাণ্ড দীর্ঘিকা পার্শ্বর্ব্বতী গ্রামসমূহের পশু, পক্ষী, মানুষের জীবন রক্ষা করিয়া এখনও সার্ব্বভৌমের অক্ষয় যশঃখ্যাপন করিতেছে। বর্ত্তমানে ঐ দীর্ঘিকা প্রস্তুত করা লক্ষ টাকাতেও হয় কিনা সন্দেহ। তৎকালে হালীসহরপরগণার জমীদার কোম্পানীর দেওয়ান দুর্গাচরণ মুখোপাধ্যায় তাঁহার মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। তিনি গুরু সার্ব্বভৌম মহাশয়কে ঐ দীর্ঘিকার জন্য ১০০ বিঘা ব্রহ্মত্রভূমি দেন; পরে সেই জমীদারী গরিফার গোবিন্দ সেনের অধিকারে আসে ও দীর্ঘিকা তাঁহারই অধিকারভুক্ত হয়। তবে ব্রহ্মত্রের কাগজপত্র দেখাইলে ফিরিয়া দিব বলিয়া জমীদার গোবিন্দ সেন সার্ব্বভৌমের বংশীয়দের বলিয়া পাঠান। কিন্তু কাগজপত্র থাকিতেও তৎকালে সার্ব্বভৌমের পৌত্র ৺দধিবামন ঠাকুরের অবহেলা ও আলস্যে দীর্ঘিকা চিরদিনের মত জমীদারের কবলেই রহিয়াছে, এখন ইহা শ্রীরামপুরের গোস্বামীদিগের অধিকারভুক্ত। ভিন্ন স্থানের ভিন্ন সমাজের শিক্ষিতজনেরা শিশুপাঠ্য বাঙ্গালা পুস্তকে দুর্গাচরণ মুখোপাধ্যায়ের জীবনী প্রকটনেও লিখিয়াছেন যে, ঐ মুখোপাধ্যায় মহাশয় গুরু রামকান্ত সার্ব্বভৌমের মাতৃশ্রাদ্ধে লক্ষটাকা ব্যয় করেন ও ঐ শ্রাদ্ধে দম্পতিবরণ প্রভৃতি কার্য্য হইয়াছিল। ভূকৈলাস রাজবংশের প্রসিদ্ধ মহাত্মা কন্দর্প ঘোষাল বাঙ্গালা গবর্ণরের অন্যতম শ্রেষ্ট কর্ম্মচারী ছিলেন। তাঁহার জামাতার সার্ব্বভৌমের শিষ্য হওয়া সূত্রে ঘোষাল মহাশয় তাঁহাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করিতেন। কথিত আছে যে এই ঘোষাল মহাশয় কোন এক সময়ে সুন্দরবন জরীপ করিতে যান ও তথায় দুটী মৌনী ধ্যানমগ্ন ক্ষুৎপিপাসাশূন্য যোগীকে প্রাপ্ত হন ও তাঁহাদিগকে স্বগৃহে আনয়ন করেন। তন্মধ্যে একটীকে সার্ব্বভৌম মহাশয় স্বগৃহে আনয়ন করিয়া সযত্নে রক্ষা করেন। তিনমাস কাল যাবৎ তিনি ও তাঁহার শিষ্য ছাত্র ও স্বজনেরা নানারূপে যোগীকে পরীক্ষা করিয়া কিছুই বুঝিতে পারেন নাই। কেবল একটা মাত্র কথা “সর্ব্বং বিষ্ণুময়ং জগৎ” ইহা যোগীর মুখ হইতে বাহির হয়। শেষে লোকালয়ে যোগীকে রাখা নিষ্প্রয়োজন মনে করিয়া সার্ব্বভৌম মহাশয় নিজব্যয়ে কাহালগাঁর পাহাড়ে রাখিবার জন্য যোগীকে নৌকা যোগে লইয়া যান। তখন এক আশ্চর্য্য ঘটনা ঘটে। পর্ব্বতোপরি হইতে ঐ প্রকারের আর এক মহাপুরুষ যেন কি এক ইঙ্গিত করিলেন, অমনি এই যোগী সেই নৌকা হইতে মুহূর্ত্তমধ্যে পর্ব্বতে উঠিয়া অদৃশ্য হন, পরে বহু অনুসন্ধানেও তাঁহার সন্ধান মিলে নাই। সার্ব্বভৌমের জীবনে ইহা এক বিচিত্র ঘটনা। এক সময় ইনি লক্ষসংখ্যক শতদল পদ্ম দ্বারা হোম করিয়াছিলেন। ইনি যেমন সৌভাগ্যশালী ছিলেন, তেমনি দীর্ঘজীবী হইয়া ছিলেন। ৮৪ বর্ষ বয়সে ১২১২ সালে ৺গঙ্গালাভ করেন।
  11. রামজয় সিদ্ধান্ত

  12. ইনি বাণেশ্বরের কনিষ্ঠ পুত্র। নিজে বিশেষ নিষ্ঠাবান্ ছিলেন। ভ্রাতাদের সঙ্গে সম্পত্তি বণ্টনে গোলযোগ বুঝিয়া শিষ্য দ্বারা বৃত্তান্ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের গোচর করেন ও নদীয়ায় উপস্থিত হন ক্রমে কয়দিনে রাজা তাঁহার ব্রহ্মনিষ্ঠায় চমৎকৃত হইয়া ব্রহ্মচারী উপাধি দেন, তদবধি লোকে তাহাকে ব্রহ্মচারী ঠাকুর বলিয়া আসিতেছে। পৈতৃক সম্পত্তির আয় হইতে এক তৃতীয়াংশ রাজাই তাঁহাকে বণ্টন করিয়া দেন। এইবার জ্যেষ্ঠানুক্রমে বাণেশ্বরের পুত্রগণের ধারার পরিচয়:
  13. জ্যেষ্ঠ রামদুলালের

  14. রামচন্দ্র ন্যায়বাগীশ,পদ্মলোচন বাচস্পতি ও কৃষ্ণমোহন শিরোমণি, এই তিন পুত্র। ইঁহারা তিনভ্রাতায় পিতৃব্য রামকান্ত সার্ব্বভৌমের সঙ্গে পৃথক হওয়ার পর ১১৯২ সনে মাতাকে দিয়া যে নূতন নির্ম্মিত নবরত্ন মন্দিরে শিবপ্রতিষ্ঠা করাইয়াছিলেন, তাহা এখনও আধুনিক মন্দিরসম্মুখে অবস্থিত আছে। ইহাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রামচন্দ্র বাগ্বাজারের প্রসিদ্ধ দুর্গাচরণ মুখোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ বিমলাদেবীর গুরু হয়েন এবং গুরুর দক্ষিণারূপে কাঁপার তালুক প্রাপ্ত হন ও তিন ভ্রাতাতেই ভোগ করিয়াছিলেন। জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্র সাত্বিক অনুষ্ঠায়ী ঋষিকল্প সুব্রাহ্মণ ছিলেন। শিষ্যেরা ইঁহাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করিত। ৪০ বর্ষ বয়সেই ইঁহার দেহ যায়।
  15. শ্রীনাথ তর্কালঙ্কার

  16. ইনি রামচন্দ্র ন্যায়বাগীশের জ্যেষ্ঠপুত্র। অতি সদাশয় সুব্রাহ্মণ ও ভ্রাতৃবৎসল ছিলেন। প্রতি অমাবস্যায় ও পিতৃপক্ষকাল ব্যাপিয়া নিত্যপার্ব্বণ শ্রাদ্ধ করিতেন। তাঁহার শিষ্য বেহালাবাসী ভবানীচরণ মুখোপাধ্যায়ের আগ্রহে ও ভক্তিতে অধিকাংশকাল বেহালাতেই থাকিতেন। তাঁহার দাতৃতা উল্লেখযোগ্য। তিনি খিদিরপুরে গঙ্গাস্নানে গিয়া অনেক দিন পট্টবস্ত্র এমন কি সাল পর্য্যন্ত দান করিয়া গামছা পরিয়া আসিতেন। তাঁহার এই দাতৃতা শিষ্যের উদারতায় রক্ষিত হইত। শুনা যায়, পৈতৃক শিষ্যসম্ভারের প্রভাবে তাঁহার বিবাহে বর ও বরানুযাত্রীদের ভাটপাড়া হইতে দণ্ডীরহাট যাতায়াতকার্য্যে ১২টী হাতী যানরূপে ব্যবহৃত হইয়াছিল। তাঁহার গঙ্গাস্নানে এতই শ্রদ্ধা ছিল যে, তিনি গঙ্গাতীর ত্যাগ করিয়া প্রবাসে কদাচিৎ যাইতেন।
  17. কালীনাথ ঠাকুর

  18. ইনি ঐ শ্রীনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। পরমধার্ম্মিক ও একান্ত নিষ্ঠাবান্ ছিলেন। ৪০ বর্ষ বয়সে দেহাবসান হয়। ইঁহার মধ্যে বিশেষ ক্রিয়াবান বলিয়া খ্যাতি পান এবং পিতার ন্যায় দাতা হয়েন। অনেক কন্যা-ভারগ্রস্তের দায় উদ্ধার করিয়া নিজে ঋণী হইলেও নিজেকে ভাগ্যবান্‌ বুঝিতেন।
  19. হারাণচন্দ্র ঠাকুর

  20. ইনি শ্রীনাথের কনিষ্ঠ পুত্র। সরলস্বভাব ও বিনয়ী ছিলেন, গুরুজনের গৌরব রাখিবার আদর্শ পাত্র ছিলেন।
  21. বিশ্বনাথ বিদ্যাপঞ্চানন

  22. ইনি রামচন্দ্র ন্যায়বাগীশের মধ্যম পুত্র এবং, বংশোচিতগুণসম্পন্ন, বিনয়ী ও সাত্বিক ছিলেন। ইঁহার শাস্ত্রবিশ্বাস অসাধারণ ছিল। সংসারের কল্যাণার্থে প্রতিমাসে দশহাজার তুলসীদানে হরিপূজা করাইতেন। তাঁহার যত্নে পৈতৃক দোরোর সম্পত্তি বাজাপ্তি কবল হইতে উদ্ধার হওয়ায় গবর্ণমেন্ট হইতে সম্পত্তির বিশ্বনাথচক্‌ নাম দেওয়া হইয়াছে। ইনি মাতার জীবনকাল মধ্যেই গঙ্গালাভ করেন, সুতরাং মাতৃশ্রাদ্ধ ঘটা করিয়া স্বয়ং করিবেন আশায় বহুদিন ধরিয়া যে রূপা-কাঁসা পিত্তল রাখিয়াছিলেন, ঐ সকল দ্রব্যের অধিকাংশ তাঁহারই শ্রাদ্ধে ব্যয়িত হয়। তাহাতে বুঝা যায়, মানুষ বৃথা আশা করে। ৪২বর্ষ বয়সে ইঁহার মৃত্যু হয়।
  23. কৈলাসচন্দ্র বিদ্যারত্ন

  24. ইনি বিশ্বনাথ ঠাকুরের মধ্যমপুত্র। আদর্শ অনুষ্ঠায়ী। তৎকালে তাঁহার সদাচার ও ব্রহ্মনিষ্ঠা সকলের আদর্শ বিষয় ছিল; তাঁহার আবাল্য ঋষিবৃত্তিতে তিনি ব্রহ্মর্ষিরূপেই সম্মানিত হইতেন। তাঁহার আবির্ভাবে বংশ উজ্জ্বন হইয়াছিল। ইনি ইছাপুর খাটুরা হইতে সুপদ্ম ব্যাকরণ পড়িরা আসেন এবং এই বংশেরই উজ্জ্বল মণি উমাকান্ত ন্যায়পঞ্চাননের চতুষ্পাঠীতে ব্যুৎপন্ন-কেশরী শ্রীরামন্যায়বাগীশের সহায়তার স্মৃতি, তন্ত্র ও ভাগবতাদি পুরাণ শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া কৃতবিদ্য হন। অল্পবয়সে পিতৃহীন এই মহাপুরুষ অনাসক্ত ভাবেই মর্য্যাদার সহিত সংসার করেন। ৺রাখালদাস ন্যায়রত্ন প্রমুখ এই বংশের বৃহস্পতিকপ্ল মহাত্মারা অনেক স্থানে ধর্ম্মমীমাংসায় সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে সন্দেহাকুল হইলে এই বিদ্যারত্ন মহাশয়ের উপদেশ ও আচারকে শাস্ত্রবৎ বলবৎ বুঝিয়া অনুসরণ করিতেন। ইনি এই গ্রামের ৺বলরাম দাসসরকারের প্রসিদ্ধ ...বাঁধা ঘাটে চতুর্হস্তমধ্যে পদ্মাসনে বসিয়া শীতাতপবর্ষা ঋতু ক্লেশ উপেক্ষা করিয়া তিনবার গায়ত্রী পুরশ্চরণ ও বহুবার মন্ত্র পুরশ্চরণ করিয়ছিলেন। নিত্য নৈমিত্তিক শ্রৌত স্মার্ত্ত এমন কর্ম্মই ছিল না যাহা তাঁহার দ্বারা অনুষ্ঠিত হয় নাই। প্রতিবর্ষে চাতুর্ম্মাস্যে একটী না একটী কঠোর ব্রত পালন করিতেন। একবার তাঁহারা স্ত্রী-পুরুষে চাতুর্ম্মাস্যে সর্ব্বজয়া নামক ব্রত করেন। এই ব্রতোদ্-যাপনের পর যে পুত্র জন্মিয়াছিল, ব্রতান্তে জাত বলিয়া ঐ পুত্রের নাম সত্যব্রত রাখেন উপনয়নাবধি জীবিত কাল যাবৎ নিরম্বু একাদশী নিত্য বৈশ্বদেববলি প্রভৃতি কার্য্য তাঁহার অব্যাহত ছিল। প্রসিদ্ধ বিদুষী রমাবাই ভাটপাড়ায় আসিলে এই বংশের রত্ন প্রসিদ্ধ স্মার্ত্ত ৺মধুসূদন স্মৃতিরত্ন মহাশয়ের ভবনে বিদ্বদ্বরেণ্যগণাধ্যুষিত সভায় শাস্ত্র্রালোচনা প্রসঙ্গে এই বিদ্যারত্ন মহাশয়ই পুরাণের সন্দিগ্ধ স্থলবিশেষের সন্দেহভঞ্জন করিয়া সভাকে চমৎকৃত করিয়া ছিলেন। ইনি কঠোপনিষদের:
    বিদ্যাঞ্চাবিদ্যাঞ্চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ।
    অবিদ্যয়া মৃত্যুং তীর্ত্তৃা বিদ্যয়ামৃতমশ্নুতে ॥
    এই নির্দেশ অনুসারে যেমন অনুষ্ঠানাত্মক কর্ম্মের সেবা করিতেন, তেমনি নানা উপনিষদ্ ও গীতার অনুশীলনে ও নিষ্কামকর্ম্ম দ্বারা পরাভক্তির সাহায্যে আত্মতত্ত্বজ্ঞানেরও অধিকারী ছিলেন। তাঁহার অবসানে গীতা বিধুরা হইলেন বলিয়া লোকে ঘোষণা করিয়াছিল। কোন্নগরের মহামহোপাধ্যায় ৺দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন মহাশয় এই কৈলাসচন্দ্রকে ঋষিজ্ঞানিই করিতেন এবং ইঁহাকেই গুরুর উপযুক্ত পাত্র বুঝিয়া নিজের উপদেশ্য পাইক্‌ মাজিটার শ্রীধর তর্কভূষণকে ইহা দ্বারা দীক্ষিত করান। এক সময় এই শ্রীরামপুরের ৺হেমচন্দ্র গোস্বামীর মাতৃশ্রাদ্ধে নানা দিগ্-দেশাগত বৃহস্পতিপ্রতিম আচারবান পণ্ডিতগণের সমক্ষে প্রভাতে গঙ্গাতীরে আন্দুলের প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক উমাচরণ তর্করত্ন ও পুর্ব্বোক্ত শ্রীধর তর্কভূষণ নিজ গুরুদেব কৈলাসচন্দ্রের পাদপূজা করেন, ইহা দেখিয়া সহস্র-সহস্র লোক বিস্মিত হন এবং কৈলাসচন্দ্রের আকার প্রকার দর্শনে তাঁহাকে স্বর্গাগত কোন ঋষি বিবেচনা করেন। তৎকালীন নবদ্বীপভূষণ ভুবনমোহন বিদ্যারত্ন তাঁহার সম্যক্ পরিচয় পাইয়া প্রণাম করিয়া বলেন, আজি আমার সুপ্রভাত। জীবনের সন্ধ্যাকালে ব্রহ্মণ্যদেবের সাক্ষাৎ পাইয়া চরিতার্থ হইলাম। সত্যই ইঁহাকে দেখিলে বোধ হইত যেন শরীরী সদাচার লোকরক্ষার্থে আসিয়াছেন। ইহাকে অনেকেই বংশের মধ্যে প্রাতঃস্মরণীয় গণনায় আসন দিয়া থাকেন। ইঁহার প্রসঙ্গ লিখিলেও পুণ্য হয়। ইনি যে সময় তীরস্থ, তৎকালের একটি ক্ষুদ্র ঘটনা বলি, ইঁহার সকল বিষয়ে বাল্যবন্ধু বংশের অন্যতম আদর্শ মহাপুরুষ শ্রীধর বিদ্যারত্ন ঠাকুর শ্রীরামপুর হইতে আসিবার কালে পথেই ইঁহার তীরস্থ হওয়ার কথা শুনিয়া ধূলি পায়েই ভাঙ্গা বাধা ঘাটের ঘরে আসিয়া দেখেন, মুমূর্ষ কেবল “ওঁরাম” বলিতেছেন। তিনি বলেন, “আমি আসিয়াছি, তোমার কন্ঠ শুষ্ক হইতেছে, এই নূতন লেবু আনিয়াছি, একটু রস গ্রহণ করিবে কি?” তদুত্তরে কৈলাসচন্দ্র বলেন “খুড়া মহাশয়! লেবুর রসে স্বরব্যক্তি হইবে না। ইষ্ট নামোচ্চারণের ব্যাঘাত হইবে। তখন সাশ্রুনেত্রে শ্রীধর বিদ্যারত্ন বলেন, “শাস্ত্র সত্য। তুমি আর ফিরিবে না। আমায় একলা রাখিয়া গেলে!” ইঁহার একদণ্ড পরেই জলে স্থলে সজ্ঞানে বাং ১২৯৪ সালে ৬৯ বর্ষ বয়সে গঙ্গায় তাঁহার মৃত্যু হইল।
  25. নবকুমার ঠাকুর

  26. ঐ বিশ্বনাথ ঠাকুরের ৩য় পুত্র। ইনি বংশোচিত গুণসম্পন্ন ছিলেন; লোকে ইঁহাকে বড়ই ভয় করিত। ইঁহার আকারে এমনিই একটা বৈশিষ্ট্য ছিল।
  27. কালাচাঁদ ঠাকুর

  28. ঐ বিশ্বনাথ ঠাকুরের ৪র্থ পুত্র। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাদের পিতার মত ভক্তি করিতেন অনুর্জ্জ্বন করিবেন কর্ম্মপ্রাণতা খুব ছিল, গ্রামের বহু লোকেই তাহাকে ভালবাসিত।
  29. নন্দলাল ন্যয়রত্ন

  30. ইনি ঐ কৈলাসচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র চতুষ্পাঠী রাখিয়া বহুছাত্রকে অন্ন দিয়া স্মৃতিশাস্ত্র অধ্যাপনা করিতেন। অশৌচ প্রকরণের ব্যবস্থায় আদর্শ ব্যবস্থাপক ছিলেন। জগন্নাথ বিদ্যার্ণব ইঁহার অন্যতম ছাত্র। ইনি সরলতার আদর্শ ছিলেন। ঘটনাক্রমে কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ মহেশ চন্দ্র ন্যায়রত্ন মহাশয় ইঁহার চরিত্র দর্শনে মুগ্ধ হইয়া ইঁহার সম্বন্ধে এই বংশেরই অলঙ্কার মহামহোপাধ্যায় রাখালদাস ন্যয়রত্ন মহাশয়কে বলিয়াছিলেন আপনাদের বংশের নন্দলালের মত চরিত্রবান্ ব্রাহ্মণোচিত গুণসম্পন্ন সরল অথচ তেজস্বী সত্যবাদী ব্রাহ্মণ পণ্ডিত আমি জীবনে দেখি নাই। ইঁহার ক্রোধ ছিল না। আবাল বৃদ্ধ বনিতা ইঁহার গুণে মুগ্ধ ছিল। নিত্যই শালগ্রাম শিলার পূজাকালে ইঁহার অশ্রুপাত হইত। বিধির বিধান অলঙ্ঘনীয়, এই মহাপুরুষকেও শেষ জীবনে পুত্রশোক ও জামাতৃশোক পাইতে হইয়াছিল। বাং ১৩১৩ শালে ৬৪ বর্ষ বয়সে বৈশাখ শুক্লা ষষ্ঠীতে গঙ্গায় ইনি দেহত্যাগ করেন।
  31. ম.ম. কমলকৃষ্ণ স্মৃতিতীর্থ

  32. footnote{নতুন সংস্করণ} নন্দলাল ন্যায়রত্নের জ্যেষ্ঠ পুত্র।
  33. ভবতোষ ভট্টাচার্য

  34. \small{(এম্.এ., বি.এল্., ডি.লিট্., কাব্যতীর্থ)}}\footnote{নতুন সংস্করণ}
  35. সত্যব্রত তর্করত্ন

  36. ইনি কৈলাশচন্দ্রের দ্বিতীয় পুত্র। নৈয়ায়িক ছিলেন। নিজ প্রতিভাবলে কাব্যালঙ্কারেও বিশেষ অধিকারী হন। এই ব্যুৎপন্নকেশরী আলঙ্কারিকের নিকট নৈষধাদি মহাকাব্য পড়িবার জন্য পাঠার্থীদের সর্ব্বদাই আকাঙ্খা হইত। ইনি বড় মধুরভাবে পড়াইতেন। ইনি তেজস্বী ও ধার্ম্মিক ছিলেন। বুদ্ধিমত্তার সহিত বাক্পটুতা ছিল। এই তেজস্বী মহাপুরুষ পিতৃরীতির অনুসরণে আজীবন ব্রাহ্মণোচিত অনুষ্ঠানে আদর রাখিতেন। ৫৮ বর্ষ বয়সে গঙ্গালাভ হয়। বংশে ইঁহার অভাব পূরণ হওয়া অসম্ভব। ইঁহার সংস্কৃত গদ্য লিখন এমন সুগম্ভীর ছিল যে তাহা পাঠ করিলে কাদম্বরী প্রভৃতি মহাগদ্যকাব্য পাঠের আনন্দ হইত।
  37. পুর্ণচন্দ্র ঠাকুর

  38. ইঁনি নবকুমার ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সুপুরুষ ও বংশোচিত মর্য্যাদাবান্‌ ছিলেন। ইনি একজন বিশিষ্ট সুকণ্ঠ ও সঙ্গীত বিদ্যায় নিপুণ থাকায় সকলেই ইঁহাকে বড় ভালবাসিত। ইঁহার জয়দেব গান বড় উচ্চদরের ও নিতান্ত হৃদয়গ্রাহী হইত। মাত্র ৪০ বর্ষ বয়সে এই গুণবান্‌ ভবধাম ত্যাগ করেন।
  39. রামকুমার ঠাকুর

  40. ইনি নবকুমারের মধ্যম পুত্র। শান্ত প্রকৃতি ও সরল স্বভাব ছিলেন। কাহারও সহিত কখনও বিরোধ ঘটে নাই। কলিকাতা ওরিএন্টাল স্কুলে ২৫ বর্ষ যাবৎ অধ্যাপক পদে থাকিয়া প্রশংসার সহিত কার্য্য করিয়া গিয়াছেন। ইনি পিতৃনামে “নবধাম” নামক এক সুধাধবল বাড়ী প্রস্তুত করেন কিন্তু দুঃখের বিষয় অকালে ইহাকে সেই নবধাম ত্যাগ করিয়া অনন্তধামে যাইতে হইয়াছে।
  41. হরিপদ ঠাকুর

  42. ইনি নবকুমারের তৃতীয় পুত্র। অতি শিষ্ট ও নম্র ছিলেন। বড় অল্পায়ু হইয়াছিলেন।
  43. চক্রপাণি ঠাকুর

  44. ইনি কালাচাঁদ ঠাকুরের পুত্র। বংশোচিত মর্য্যাদা রাখিবার জন্য আগ্রহী ছিলেন। ইঁহারও অকালে মৃত্যু হয়।
  45. পদ্মলোচন বাচস্পতি

  46. ইনি রামদুলালের মধ্যম পুত্র। ইনি একজন বিশিষ্ট সুপুরুষ ভাগ্যবান্‌ ও ক্রিয়াশূর ছিলেন। আধুনিক মন্দির সম্মুখে যে নবরত্ন শিব মন্দিরটি সর্ব্বাপেক্ষা উচ্চ উহা তাঁহারই নির্ম্মিত বাং ১১১৯ সালে তিনি উহাতে শিব প্রতিষ্ঠা করেন। এ শিবলিঙ্গটিও আবার গ্রামের সকল শিব অপেক্ষা আকারে বৃহৎ। শুনা যায় উহা নাকি ওজনে ৭ মণ। এই প্রসঙ্গে এক গল্প আছে, পদ্মলোচনের এই শিব রামমোহন চক্রবর্তী নামক তাঁহার এক অতি বলবান ভক্ত শিষ্য একা গঙ্গার ঘাট হইতে আনিয়া মন্দিরমধ্যে পিণাকে বসাইয়া দেন। মন্দিরগাত্রে প্রোথিত শিলাফলকে উৎকীর্ণ নিম্নলিখিত শ্লোকটিতে পদ্মলোচনের ধর্ম্ম প্রাণতা আজও প্রস্ফুট রহিয়াছে:
    জাতঃ সদ্রঘুবংশ পাবন গুরোর্বংশাম্বুধৌ যো দ্বিজঃ
    খ্যাতঃ শ্রীযুত পদ্মলোচন ইতি যঃ প্রাপ্তুং শিবং মন্দিরম্।
    তেনেদং শববাসবাসব জগদ্বাসস্য শম্ভোঃ কৃতং
    বাসার্থং কৃতবহ্ণিবারিধি ধরামানে শকে মন্দিরম্‌॥
    ইনি নলডাঙ্গার রাজা ইন্দুভূষণ দেবরায়ের দীক্ষা গুরু হন। আজিও ইঁহার বংশে নলডাঙ্গার রাজসংসার হইতে দৈনিক ১/- টাকা হিসাবে বার্ষিক ৩৬০/- টাকা গুরুবৃত্তি প্রদত্ত হইতেছে। ইনি অনেক সম্পত্তি অর্জন করিয়া যান। ৮৪ বর্ষ বয়সে ইঁহার গঙ্গালাভ হয়।
  47. কৃষ্ণমোহন শিরোমণি

  48. ইনি রামদুলালের পুত্র। একজন নৈয়ায়িক হইয়াছিলেন। অকালে ইঁহার দেহাবসান হওয়ায় ও অপুত্রকতা নিবন্ধন ইঁহার সম্পত্তি ও ধারা দৌহিত্রগত হইয়াছে।
  49. রামকেশব ঠাকুর

  50. ইনি পদ্মলোচনের পুত্র। বংশোচিত ক্রিয়াবান্‌ ছিলেন। পদ্মলোচনের বহু পুত্রের মধ্যে ইনি থাকায় ইঁহাতেই সমস্ত সম্পত্তি আসিয়াছিল।
  51. মধুসূদন ঠাকুর

  52. রামকেশব ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ধনবান্‌ রূপবান্‌ ক্রিয়াবান্‌ ও মর্য্যাদাবান্‌ ছিলেন।
  53. রামগোপাল বিদ্যারত্ন

  54. রামকেশব ঠাকুরের পুত্র, ইনি সৌম্যদর্শন ও সুপুরুষ ছিলেন। স্বভাবে একটা বিশেষ মাধুর্য্য ছিল। সংস্কৃতভাষায় সুব্যুৎপন্ন এই মহাপ্রাজ্ঞ তন্ত্রে ও পুরাণে একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। সংসারে পৈতৃক ক্রিয়া কলাপ অব্যাহত ভাবে করিয়া গিয়াছেন। ইঁহার যথেষ্ট শিষ্য সম্পত্তি। বেহালা নিবাসী ভূতপুর্ব্ব অনারেবল শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ রায় তাঁহাদিগের অন্যতম শিষ্য ছিলেন। শেষবয়সে জ্যেষ্ঠ পুত্রের অকালমৃত্যুতে বড়ই শোকার্ত্ত হইয়াছিলেন। গ্রামের এই গণ্য-মান্য মহাত্মা ৮২ বর্ষ বয়সে গঙ্গায় দেহত্যাগ করেন।
  55. বীরেশ্বর তর্করত্ন

  56. রামগোপালের জ্যেষ্ঠ পুত্র। বংশের একজন অন্যতম উজ্জ্বলরত্ন বীরেশ্বর অকালে ইহধাম ত্যাগ করিয়া তাঁহার প্রিয় বন্ধুবর্গকে নিষ্প্রভ করিয়া গিয়াছেন। আজ তিনি জীবিত থাকিলে ভাটপাড়ার কতই না গৌরব বৃদ্ধি পাইত। তিনি এই বংশেরই অন্যতম উজ্জ্বল মণি মহামহোপাধ্যায় শিবচন্দ্র সার্ব্বভৌমের একজন বিশিষ্ট ছাত্র ছিলেন। ন্যায় শাস্ত্র সমগ্র অধ্যয়ন করিয়া কৃতিত্বের সহিত উহা পড়াইতে আরম্ভ করেন কিন্তু কাল তাঁহাকে গৌরব মুকুট পরিতে সময় দিল না কাড়িয়া লইয়া গেল। শুধু কি ন্যায়ে তাঁহার কৃতিত্ব কাব্যশাস্ত্রে অগাধ বুৎপত্তি, কবিত্বে সিদ্ধ মস্তিস্ক। ভাটপাড়ার সংস্কৃত নাটক রূপ একটা বিশুদ্ধ আমোদ ছিল। বীরেশ্বর তাহাতে সংস্কৃতে গান রচয়িতা থাকিতেন। সে গান যে কি সুললিত ভাষাময়, কি সুন্দর ভাবময় হইত তাহা এখন আর বলিয়া উঠা যায় না। তাঁহার অকালমৃত্যুতে বংশের বিশেষ ক্ষতি হইয়াছে। বাং ১৩১৯ শালে ৪৩ বর্ষ বয়সে পিতার জীবদ্দশায় তিনি ৺কাশী প্রাপ্ত হন।
  57. কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন

  58. ইনি রামকেশবের পৌত্র ও মধু ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সংস্কৃত ভাষায় সুব্যুৎপন্ন ও অদ্বিতীয় মেধাবী ছিলেন। এত উদ্‌ভট শ্লোক তাঁহার কণ্ঠস্থ ছিল যে কেহ তাঁহাকে নূতন শ্লোক শুনাইতে পারিত না।
  59. যোগীন্দ্র নাথ বিদ্যাচুঞ্চু

  60. ইনি রামকেশবের পৌত্র ও মধু ঠাকুরের মধ্যম পুত্র। ইঁহার বিদ্যাচুঞ্চু উপাধি কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের রাজকীয় উপাধি পরীক্ষায় প্রাপ্ত। কাব্যলঙ্কারে ইনি একজন বিশিষ্ট ব্যুৎপন্ন ছিলেন। ভাটপাড়ার বিশুদ্ধ আমোদ সংস্কৃত নাটকাভিনয়ের ইনি একজন তাৎকালিক অন্যতম অগ্রণী। কাব্যরসিক এই ধীমান সংস্কৃতে অনেক কবিতা রচনা করিয়া গিয়াছেন। ভাটপাড়ার বিদ্যোদয় নামক সংস্কৃত মাসিক পত্রিকায় তাঁহার যথেষ্ঠ কবিতা বাহির হইয়াছে এবং এখনও কলিকাতার সংস্কৃত-পরিষৎ পত্রে বাহির হইতেছে। তাঁহারও অকাল মৃত্যুতে ভাটপাড়ার পণ্ডিত সমাজ বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। \newpage

    রামকান্ত সার্ব্বভৌমের ধারায়

  61. রামকুমার ঠাকুর

  62. ইনি পৈতৃক মর্য্যাদার অনুসরণে সম্ভ্রমের সহিত কাল যাপন করিয়াছিলেন। অনেক স্বজনের প্রতিপালন করিতেন।
  63. কৃষ্ণকিঙ্কর তর্কভূষণ

  64. ইনি অনেক শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ও সদনুষ্ঠায়ী ছিলেন। ইঁহার তেজস্বীতা অনন্য সাধারণ ছিল অদৃষ্টদোষে পিতৃসম্পত্তিতে বঞ্চিত হইয়াও নিজের তপঃ প্রভাবে ও পুত্রের অভ্যুদয় ফলে পৈতৃক বাস্তু তাঁহারই অধিকারে আসিয়াছিল। তাঁহার পুত্রসম্পদ ঐহিক নশ্বর সম্পদ অপেক্ষা বঙ্গের আদরনীয় তিনি তৃপ্তিপূর্ণ ছিলেন। পুরুষোত্তমক্ষেত্রে যাইয়া প্রসাদ ভোজন করা ইঁহায় নিকট পাপ বলিয়া বিবেচনা ছিল তাই তিনি শ্রীক্ষেত্রপ্রত্যাগত আত্মীয়কে প্রায়শ্চিত্ত করাইয়াছিলেন।
  65. রামজীবন শিরোমণি

  66. রামকুমার ঠাকুরের জ্যেষ্ঠপুত্র। ন্যায়শাস্ত্রে দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত হইয়াছিলেন। বহু ছাত্রকে অন্ন দিয়া আজীবন অধ্যাপনা করিয়াছিলেন। ইঁহার শাস্ত্রে তীব্র প্রতিভায় সভাগত পণ্ডিত মাত্রেই চঞ্চল হইতেন। এক সময় ভাটপাড়ায় নবদ্বীপের তৎকালীন কএকটী পণ্ডিত আসেন এই শিরোমণি মহাশয়ই কেবল তাঁহাদের সম্মুখে ছাত্রদিগকে নব্য ন্যায়ের পাঠ দেন ও ঐ সূত্রে ৪ ঘণ্টা কাল বিচার হয় নবদ্বীপের পণ্ডিতেরা তাঁহার শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্য দর্শনে চমৎকৃত হন ও শেষ এই বলিয়া অভিবাদন করেন যে সেই নব্য ন্যায়ের প্রবর্ত্তক রঘুনাথ শিরোমণিই আজি আমাদের সম্মুখে রামজীবন শিরোমণি হইয়া আসিয়াছেন। ধন্য ভাটপাড়া!
  67. কালীপ্রসাদ ঠাকুর

  68. ইনি কৃষ্ণকিঙ্কর তর্কভূষণের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সাধুশীল সুব্রাহ্মণ ছিলেম। ইঁহার অকাল মৃত্যু ঘটিলে সাধ্বী প্ত্নী ১২২২ সালে সহমরণে যান, যাইবার পূর্ব্বে জীবিত শ্বশুর কৃষ্ণকিঙ্কর ঠাকুরকে আত্ম শক্তি দেখাইবার জন্য নিজের হাত জ্বলন্ত চুল্লীতে প্রবেশ করাইয়া স্মিতমুখে দগ্ধ করতঃ বলেন, ঠাকুর এখন আপনি অনুমতি দেন বালক সন্তানের পালনভার রহিল, তখন শ্বশুরের অনুমতি লইয়া সহমৃতা হন। ইঁহার পুত্রের দৌহিত্রে সম্পত্তির অধিকার ঘটিয়াছে।
  69. দধিবামন ঠাকুর

  70. ইনি রামকুমার ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। গৃহী হইয়াও যতি ধর্ম্ম আচরণ করিতেন। শুনা যায় লতাসিদ্ধ হইয়াছিলেন। কাষ্ঠ পাদুকা সহায়ে দিগ্-দিগন্তের তীর্থ পর্য্যটন করিতেন। শিষ্যেরা ভয় করিত। এক সময় এক শিষ্য ইঁহার জল ভ্রমণ কালে মৌনব্রতাবস্থায় সন্নিহিত হইয়া ৫০০/- টাকার একটী তোড়া দান করেন, ইনি তৎক্ষণাৎ তাহা গঙ্গাগর্ভে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন। ইঁহার গার্হস্থ্যে অনুরাগবশতই বহুল পৈতৃক সম্পত্তি নষ্ট হইয়া যায়।
  71. হলধর তর্কচূড়ামণি

  72. কৃষ্ণকিঙ্কর ঠাকুরের মধ্যম পুত্র প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষ। ইনি অদ্বিতীয় নৈয়ায়িক ছিলেন। ইনি সভাস্থ হইলে বঙ্গের পণ্ডিতবর্গ বিচলিত হইতেন, যেন ইনি দ্বিতীয় গৌতম। ইঁহার রচিত ন্যায়শাস্ত্রের পত্রিকা "নবীনা হালধরী” নামে খ্যাত আছে। ইনি বহু ছাত্রকে অন্ন দিয়া ন্যায়শাস্ত্র অধ্যাপনা করিছেন। ইঁহার বহু ছাত্র নানাদেশে দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত হইয়াছিলেন, ইঁহার মধ্যে আমাদের বংশের উজ্জ্বল মণি মহামহোপাধ্যায় রাখালদাস ন্যায়রত্ন অন্যতম। গভীর শাস্ত্রচর্চ্চার সঙ্গে আচারানুষ্ঠানের সহযোগ তিনি যেমন রাখিয়াছিলেন তাহা অন্যের পক্ষে একান্ত অসম্ভব, যেন সাক্ষাৎ ঋষি। গ্রামের ইতর-ভদ্র আবাল-বৃদ্ধবনিতা সকলেই তাঁহাকে আপনার জন বলিয়া বুঝিত, তিনি নশ্বর ধনে ধনী না হইলেও অবিনশ্বর বিদ্যা ও ধর্ম্ম ধনে বিশেষ সম্পন্ন ছিলেন। তৎকালে সংবাদপত্র প্রচলন না থাকিলেও বঙ্গের এমন কোন শিক্ষিত পরিবার ছিলনা যাহারা ইঁহাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে না জানিত। তিনি আজীবন সদাব্রত করিয়া গিয়াছেন। তৎকালে তিনি সাধারণের গ্রাম্য বিবাদ এরূপ ভাবে মিটাইয়া দিতেন যে উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট হইয়া যাইত। তিনি বৈমাত্রের ভ্রাতার সংসার একান্নবর্ত্তিতায় রাখিয়াছিলেন। নড়ালের প্রসিদ্ধ ভূস্বামী গুণগ্রাহী রামরতন রায় তাঁহাকে দেবতাবোধে সম্মান করিতেন কিন্তু তাঁহাকে ভূমি ব্যতীত অন্য কোন প্রতিগ্রহ করাইতে পারিবেন না জানিয়াই ফরিদপুর জেলায় একটী ভূসম্পত্তি খাজনা নির্দ্ধারণে তাঁহার নামে ব্যবস্থা করিয়া দেন, ঐ গাঁতী তাঁহার বংশধর এখনও ভোগ করিতেছেন। অনেক ইংলণ্ডীয় রাজপুরুষ এই তর্কচূড়ামণির সঙ্গে সদালাপ করিতে উৎসুক হইতেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য তদনীন্তন বারাসতের জএণ্ট ম্যাজিষ্ট্রেট ত্রেবর সাহেব। সাহেব বাঙ্গালা জানিতেন বলিয়াই সময়ে-সময়ে তর্কচূড়ামণির সঙ্গে দর্শন শাস্ত্রের সদালাপ করিয়া সুখী হইতেন ও তর্কচূড়ামণিকে তিনি বিশেষ শ্রদ্ধা করিতেন। শুনিয়াছি উক্ত সাহেব মহোদয় ১৬ বর্ষ পরে স্বদেশ হইতে কলিকাতা হাইকোর্টের জজ হইয়া আসেন এবং আসিয়াই তর্কচূড়ামণির পুত্রকে বিচারক করিয়া দিবার আগ্রহে কিছু ইংরাজী শিখিবার জন্য অনুরোধও করিয়া ছিলেন। যাহা হউক, এই মহাপুরুষ তর্কচূড়ামণি, ইঁহার প্রসঙ্গে লিখিলে মনে শান্তি আসে। ইঁহার সম্বন্ধে অন্যান্য অনেক ঘটনা আছে।
  73. যজ্ঞপতি বিদ্যারত্ন

  74. ইনি হলধর তর্কচূড়ামণির উপযুক্ত পুত্র। নৈয়ায়িক পণ্ডিত হইয়া বহু ছাত্রকে ন্যায়শাস্ত্র পড়াইয়াছিলেন। ইঁহার প্রিয়ভাষিতা গুণের সঙ্গে এমন একটী গুণ ছিল যে তিনি কখন অনাবশ্যক পরচর্চ্চা করিতেন না। ইঁহার কাছে বসিলে সকলেই বুঝিত যে ইঁহার মত শুভাকাঙ্খী আমার আর নাই। মালদহ জেলার চাঁচলের রাজা ঈশ্বর চন্দ্র চৌধুরীর সংসারের গুরু হন। অনেক নূতন শিষ্য ইঁহার ঘটিয়াছিল, বহুতর নূতন শিষ্য ইঁহার নিকট দীক্ষা পাইয়াছিল, বহু ভূসম্পত্তি প্রতিগ্রহ পাইয়াছিলেন, বহুদিন চাঁচল ষ্টেট হইতে ৩৬০ টাকা বার্ষিক গুরুবৃত্তি ভোগ করিয়া গিয়াছেন। শেষ জীবনে নিজের মন্ত্রশিষ্যা বাগবাজারের ৺দুর্গাচরণ মুখোপাধ্যায়ের পৌত্রবধূ বামাসুন্দরী দেবী ৫০০ টাকা আয়ের উলুসী পরগণায় পত্তনী সম্পত্তি ইঁহাকে দান করেন, সে সম্পত্তি ইঁহার পুত্রেরা ভোগ করিতেছেন। ইঁহার অন্যান্য ক্রয়োপার্জ্জিত অনেক সম্পত্তি আছে। ইনি বংশের উজ্জ্বল রত্ন ছিলেন, আকারে প্রকারে সভায় বসিলে একটী শুভলোক বিবেচনা হইত। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের ঘরে জন্মিয়াও ভাগ্যযোগ থাকায় অনেক নিত্য-নৈমিত্তিক কাম্য ক্রিয়ায় ধনবানের মত ধনব্যয় করিয়া বিশেষ যশস্বী হইয়াছিলেন।
  75. পীতাম্বর বিদ্যারত্ন

  76. কৃষ্ণকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র, বংশের উজ্জ্বল পুরুষ। ইঁহার বড় রাশি ভার ছিল। ইনি বংশ মর্য্যাদায় অক্ষুণ্ণ থাকিয়া সংসারের উন্নতি করেন। এই সদাচারী সুব্রাহ্মণ গুরুর উপযুক্ত পাত্র থাকায় বহু শিষ্য করেন। কোটালীপাড়ের শুনক বংশের দৌহিত্র ছিলেন। ইঁহার পুত্রেই পুণ্য প্রকাশ।
  77. দিগম্বর তর্কসিদ্ধান্ত

  78. ইনি পীতাম্বর ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। একজন উত্তম বৈয়াকরণিক ছিলেন। সুপদ্ম ব্যাকরণের চতুষ্পাঠী করিয়া বহু ছাত্র পড়াইয়া গিয়াছেন। বিষ্ণুমিশ্র প্রভৃতি সুপদ্ম ব্যাকরণের ভাষ্য ইঁহার মুখে ছিল, ব্যাকরণের ফক্কিকা তাঁহার অভাবে ভাটপাড়া হইতে উঠিয়া গিয়াছে। এখনও ভাটপাড়ায় তাঁহার অনেক কৃতী ছাত্র আছেন। ইনি নিষ্ঠাবান্ ধার্ম্মিক ছিলেন, তন্ত্রমত অনুষ্ঠানের সূক্ষ সন্ধান বেশ রাখিতেন, নিত্য কর্ম্ম কখন বাদ দেন নাই, এমনকি মধ্যে-মধ্যে বিশেষ পীড়া ঘটিলে তাঁহার বৈদিক সন্ধ্যা ছাত্রেরা প্রতিনিধি পাইয়া অনুষ্ঠান করিত। বড় বলবান্ ছিলেন। যৌবনে ৭ মণ কাষ্ঠের গুড়ী একা উঠাইয়া ৫০ হাত দূরে ফেলিয়াছিলেন; অভিভাবকেরা ইঁহার বল-হ্রাসের জন্য রক্ত-মোক্ষণের পরামর্শ করিয়া ছিলেন। এরূপ অসামান্য বলশালী হইয়াও অতি নম্র ও সাত্বিক লোক ছিলেন। সরল ভাবেই সকলের সঙ্গে ব্যবহার করিতেন।
  79. শশিশেখর তর্করত্ন

  80. ইনি পীতাম্বর ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। ইনি কুশাগ্র বুদ্ধি নৈয়ায়িক ছিলেন এবং প্রগাঢ় শাস্ত্র বিশ্বাসী ও ধর্ম্মসম্পন্ন ছিলেন। ইঁহার অধ্যাপক বংশের উজ্জ্বলমণি রাখালদাস ন্যায়রত্ন মহাশয় বলিয়াছিলেন যে শশীকে পড়াইয়া আমার শাস্ত্রে সূক্ষ দৃষ্টি আসিয়াছে। ইঁহার প্রতিভা যেমন শাস্ত্রে, তেমনি বৈষয়িক সামাজিক সকল ব্যাপারেই অকুণ্ঠিতা ছিল, ইনি সকলেরই নিজস্ব ছিলেন, সভায় প্রথম বসাইতে হইলে ইঁহাকেই বসিতে হইত, ইঁহার অভাবে ভাটপাড়া সমাজের যে ক্ষতি হইয়াছে তাহার পূরণ অসম্ভব। ইঁহার প্রিয় মধুর ভাষণে লোক মুগ্ধ হইত। এক সময়ে বাং ১২৮২ সালে চুঁচুড়া মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুরের আশ্রম হইতে অতর্কিত ভাবে ২জন মহর্ষির আত্মীয় ভাটপাড়ায় উপস্থিত হন। তাঁহারা এই তর্করত্নের শাস্ত্রীয় আলাপ শুনিয়া মুগ্ধ হইয়া বলিয়া যান, বাঙ্গালায় সদালাপী প্রতিভাবান্‌ সুপণ্ডিত দেখি নাই।
  81. জগন্নাথ বিদ্যার্ণব

  82. ইনি শশিশেখর তর্করত্নের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ইনি পিতার যোগ্য সন্তান, কাব্য ও স্মৃতিশাস্ত্রে ব্যুৎপন্ন, বুদ্ধি প্রতিভা অসামান্য ছিল। ভাটপাড়ার সংস্কৃত নাটকাভিনয়ের প্রথম সূত্রপাতের অন্যতম নেতা। ইনি ভাল সরস কবিতা লিখিতেন; ইঁহার রচিত কালকৌতুক প্রহসন অমুদ্রিত ভাবেই নষ্ট হইয়াছে। বঙ্গাবাসীর শাস্ত্র প্রকাশে বহুতর গ্রন্থেরই ইনি অনুবাদক ছিলেন। ইঁহার অকাল মৃত্যুতে ভাটপাড়া বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত। এরূপ সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপন্ন কেশরী গ্রামে আর হওয়ার আশা নাই।
  83. কাশীনাথ বাচস্পতি

  84. ইনি দিগম্বর তর্কসিদ্ধান্তের মধ্যম পুত্র। কাশীনাথের বিষয় লিখিয়া উঠা যায় না। সংস্কৃতে সুব্যুৎপন্ন সুবৈয়াকরণিক কাশীনাথ পিতার উপযুক্ত পুত্র। ইনি যখন পিতৃ-চতুষ্পাঠী চালাইতে থাকেন তখন ভাটপাড়ায় যেন ব্যাকরণ-কাব্য-অলঙ্কার সজীব মূর্ত্তিতে বিরাজ করিত। এরূপ ছাত্র-হিতৈষী অধ্যাপক প্রায় দৃষ্টিগোচর হয় না। ইনি ধর্ম্মবিশ্বাসী অনুষ্ঠায়ী ও পরোপকারী ছিলেন। কি ভদ্র কি ইতর, সকলের কাছেই কাশীনাথ নিজস্ব ছিলেন। তাঁহার সময়ে ভাটপাড়ায় সারস্বতোৎসব একটা বিশিষ্ট উৎসব ছিল, তিনি ভাটপাড়ায় সংস্কৃত নাটকাভিনয়ের প্রাণ ছিলেন। তাঁহার অকাল মৃত্যুতে ভাটপাড়ার যে ক্ষতি হইয়াছে তাহা পূরণ হওয়া অসম্ভব।
  85. পঞ্চানন ঠাকুর

  86. রামজীবন শিরোমণির পৌত্র। অতি সুব্রাহ্মণ ছিলেন, বংশোচিত মর্য্যাদা লঙ্ঘন করিতেন না। ৺রামকান্ত সার্ব্বভৌমের শিষ্যসমৃদ্ধির প্রায় সম্পূর্ণ অংশ ইঁহাতেই আসিয়াছিল। এই তেজস্বী গুরু গুরূচিতগুণগ্রামে ভূষিত ছিলন।
  87. রামকৃষ্ণ ন্যয়-তর্কতীর্থ

  88. ইনি পঞ্চানন ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক ছিলেন, অনেক ছাত্রকে অন্ন দান পূর্ব্বক পড়াইয়া কৃতবিদ্য করিয়া গিয়াছেন, ইঁহার ছাত্রগণের মধ্যে ঢাকার রামকৃষ্ণ ন্যায়তীর্থ, খুলনার তারাপ্রসন্ন তর্কতীর্থ উল্লেখ যোগ্য। ইনি কেবল নৈয়ায়িক নহেন, সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপন কেশরী ছিলেন। ইঁহার কবিতা ও ভাষা প্রাচীন পণ্ডিতদিগের মতই ছিল। এই তেজস্বী ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের অকাল বিয়োগে ভাটপাড়ার যে ক্ষতি হইয়াছে তাহা পূরণ অসম্ভব। ইঁহার সভায় বক্তৃতাকালে তীব্র প্রতিভা বিকাশ পাইত। অনেক লোক ইঁহার গুণে মুগ্ধ ছিলেন। ইনি কনিষ্ঠের সহযোগে বাং ১৩২০ সালে রামকান্ত সার্ব্বভৌমের নবরত্ন মন্দির সংস্কার করিয়া উহার শ্রীবৃদ্ধি করিয়া গিয়াছেন।
  89. শ্রীকন্ঠ ঠাকুর

  90. ইনি পঞ্চানন ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। ইনি পরোপকারী সমাজে প্রতিপত্তি সম্পন্ন ছিলেন। ইঁহার অকাল মৃত্যু সমাজকে শোকার্ত্ত করিয়াছে। শিষ্য মণ্ডলীতে ইঁহার সারযুক্ত বাক্য বড়ই শ্রদ্ধার সহিত গৃহীত হইত।

    রামজয় সিদ্ধান্তের ধারায়:-

  91. রামচরণ তর্কবাগীশ

  92. একজন সাধক মহাপুরুষ ছিলেন। ইঁহার বাকশক্তির অনেক নিদর্শন শুনা যায়।
  93. রামদেব বিদ্যারত্ন

  94. ইনি রামচরণের পুত্র। অসাধারণ সদ্‌গুণসম্পন্ন ছিলেন। বংশোচিত মর্য্যাদা লঙ্ঘন করেন নাই, কাহাকে মর্য্যাদা লঙ্ঘন করিতে দেখিলে নিবৃত্ত করিতেন। এই তেজস্বী গুরূচিতগুণসম্পন্ন মহাপুরুষের সময়ে গ্রামের বিবাদ রাজদ্বারে যাইতনা। ইনি হলধর তর্কচূড়ামণির পদানুসরণে মধ্যস্থ হইয়া ইতর ভদ্র সকলেরই বিবাদ ভঞ্জন করিয়া দিতেন। তাদৃশ বিভব না থাকিলেও অন্নদানে কাতরতা করিতেন না। গ্রামে পিতৃ-মাতৃ কন্যাদায়গ্রস্ত কেহ আসিলে তাঁহার আশ্রয়ে থাকিত এবং তিনি সকলকে সমাবেশ করিয়া তাহার দায় উদ্ধারের সাহায্য করিয়া দিতেন। এদিকে এমন অমায়িক ছিলেন যে বালকের ন্যায় বালকের সঙ্গে ব্যবহার করিতেন, তাহাতে সকলেই তাঁহাকে শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিত। অনেক বিদ্যার্থী তাঁহার গৃহে অন্ন পাইয়া অন্য চতুষ্পাঠীতে অধ্যয়ন করিত। কখন প্রার্থীকে বিমুখ করেন নাই। ইঁহার পুণ্য প্রকাশ পুত্রেই হইয়াছিল।
  95. রামময় বিদ্যাভূষণ

  96. ইনি রামদেব ঠাকুরের পুত্র। ইনি ব্যুৎপন্ন-কেশরী স্মৃতিশাস্ত্রে অসাধারণ অধিকারী হন। অনেক ছাত্রকে অন্ন দিয়া কৃতবিদ্য করিয়াছেন। এই মহাপুরুষ নানাগুণে অলঙ্কৃত ছিলেন, প্রিয়মিষ্টভাষিতাগুণে অনেকেই ইঁহার বশ্য ছিল। ইঁহার অসাধারণ কবিত্বশক্তি ছিল, ইঁহার রচিত “প্রতাপচরিত” নামক সংস্কৃত সংস্কৃত নাটক প্রাচীন কবিদের নাটকের ন্যায় গুণালঙ্কারভূষিত হইয়া এখনও অমুদ্রিত অবস্থায় আছে। ইঁহার “কাল বিলাস” নামক সংস্কৃত প্রহসন মুদ্রিত হইয়া ভাটপাড়ায় অভিনীত হইয়াছিল। ইনি শাস্ত্র বিষয়ে অনেক সভা জয় করিয়াছিলেন। ইনি ভাটপাড়ায় প্রথম সংস্কৃত নাটকাভিনয়ের অন্যতম প্রধান নেতা। ইঁহার সকল কাজই ভাটপাড়ার গৌরববৃদ্ধিকর হইয়াছিল। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্ন ইঁহার পাণ্ডিত্য ও বুদ্ধি প্রতিভার ভূয়সী প্রসংশা করিতেন। ইনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ গ্রন্থের কতিপয় স্থানের অসারতা প্রতিপন্ন করিয়া ছিলেন। অকালে ইঁহার তিরোধানে ভাটপাড়া অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। আর এরূপ পুরুষ এবংশে হওয়া অসম্ভব। \footnote{অনুকূলচন্দ্র জ্যোতিষ-ব্যাকরণতীর্থ এনার ছাত্র (সংস্কৃত সাহিত্যের সাধক ২)}
  97. রামসুন্দর তর্কবাগীশ

  98. ইনি রামজয় সিদ্ধান্তের মধ্যম পুত্র। ইনি অতিথিবাৎসল্যে ও ব্রহ্মচর্য্যের দার্ঢ্যে এই বংশে অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাপন্ন মহাপুরুষ ছিলেন। ইনি বীরেশ্বর ন্যায়লঙ্কার ঠাকুরের মন্দিরযুগলের মধ্যে নয়নাভিরাম রামসীতার এক মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। সে মূর্ত্তি এখন আর নাই। কথিত আছে যে তিনি কখন জীবনে ত্রিসন্ধ্যার যথাযোগ্য কাল অতিক্রম করিতেন না। এই নিষ্ঠার তিনি ব্রহ্মচারী ঠাকুর বলিয়া অভিহিত হইতেন। তেজস্বী ব্রহ্মচারীর মত তাঁহার রূপও ছিল। মধ্যমগ্রামের জমীদার ৺রামশরণ মুখোপাধ্যায় তাঁহার রূপ ও গুণে আকৃষ্ট হইয়া তাঁহার শিষ্য হন। রামশরণ ব্যাধিগ্রস্ত ছিলেন, রামসুন্দরের নিকট মন্ত্র লইয়া এবং ৺গুরুর আদেশে স্বদেশে রামেশ্বর নামক এক শিব প্রতিষ্ঠা করিয়া তিনি ব্যাধিমুক্ত হন। এই ঘটনায় জমীদারগোষ্ঠী ব্রহ্মচারী ঠাকুরের নিতান্ত ভক্ত হয়েন। রামশরণের পুত্র, ভক্ত গৌরীচরণও কোন্নগরের পঞ্চানন তলার উত্তর দিকে গঙ্গার তীরে গুরুকে দিয়াই এক শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করান। বর্ত্তমানে উক্ত মন্দির গঙ্গাগর্ভে বিলীন হইয়াছে। রামসুন্দর দেবমন্দির প্রতিষ্ঠার বড়ই পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি এই ২৪ পরগণার অন্তর্গত নারারণপুর গ্রামবাসী তাঁহার এক শিশ্য ৺ভৈরব চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা উক্ত গ্রামে এক মনোরম শ্বেতপ্রস্তর নির্ম্মিত শিবমূর্ত্তির প্রতিষ্ঠা করান। গুরুর নামানুসারে ঐ শিব “হরসুন্দর” নামে অভিহিত হইয়া আসিতেছেন। আজিও নারায়ণপুরে হরসুন্দর শিবমন্দির রামসুন্দরের গৌরবকাহিনী ঘোষণা করিতেছে। রথ্যা ও বৃক্ষ প্রতিষ্ঠাতেও তাঁহার বড় ঝোঁক ছিল। ভাটপাড়ার ভাঙ্গাবাঁধা ঘাটের রাস্তার উপরে যে দুটি বিশাল অশ্বত্থ বৃক্ষ আজিও দেখা যায় ইঁহা তাঁহারই প্রতিষ্ঠিত। তাঁহার আশা ছিল যে তিনি দুধারে বৃক্ষের সারি দিয়া এক বিশাল রথ্যা প্রস্তুত করবেন। এই প্রসঙ্গে গোবরডাঙ্গার প্রসিদ্ধ ভূস্বামী, এই বংশেরই শিষ্য ৺কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের সহিত তাঁহার কথা হয় এবং রাস্তা ভাটপাড়া হইতে গোবরডাঙা পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইবে এইরূপ প্রস্তাব থাকে। ঠাকুরের এমন বেগ যে এই বৃহৎ কার্য্যের জন্য কালীপ্রসন্ন বাবুর নিকট নগদ ৫/- টাকা জমা দেন এবং বলেন আমি ক্রমে ক্রমে টাকা সরবরাহ করিব। কালীপ্রপন্ন বাবু ঐ নিস্ব ব্রাহ্মণপণ্ডিতের আগ্রহাতিশয্যে বিস্মিত হইয়াছিলেন। অসম্ভব প্রস্তাব অবশ্য কার্য্যে পরিণত হয় নাই।
  99. নীলমাধব ঠাকুর

  100. রামচরণ ঠাকুরের প্রপৌত্র। ইনি বুদ্ধিমান্‌ ও তেজস্বী ছিলেন। ব্যয়কুণ্ঠতা করিতেন না। অশন বসনাদি কার্য্যে খুব দৃষ্টি ছিল। নিজে খুব সৌখীন লোক ছিলেন। রাশি ভার থাকায় সকলেই তাঁহাকে ভয় ও ভরসা করিত।
  101. শম্ভূচন্দ্র বিদ্যাসাগর

  102. ইনি ব্রহ্মচারী ঠা\index{কু}রের অন্যতম প্রপৌত্র। গুরূচিত গুণসম্পন্ন ছিলেন। কখন কাহারও সঙ্গে বিরোধ ছিল ন। শৈশবে মাতৃহীন ও পিতা শরীকানী বিবাদে গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া সুদূর পশ্চিমে শিষ্যসকাশে যান, তখন ইঁহাকে সপিণ্ড ভ্রাতা বিশ্বনাথবিদ্যাপঞ্চাননের পত্নির হস্তে সমর্পণ করিয়া যান। ইনি কৈলাশচন্দ্র বিদ্যারত্নের জননীর স্তন্য পানে বর্দ্ধিত হন। কৈলাশচন্দ্র উপনয়ন কাল পর্য্যন্ত শুম্ভূচন্দ্রকে নিজের জ্যেষ্ঠ সহোদরই জানিতেন। ইঁহার এক শিষ্য উত্তম বাসগৃহ নির্ম্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন।
  103. গিরীশচন্দ্র সিদ্ধান্তরত্ন

  104. শম্ভুচন্দ্রের পুত্র। যেমন রূপ তেমনি বুদ্ধি ও অন্যান্য গুণরাশিতে ইনি ভূষিত ছিলেন। তন্ত্র ও জ্যোতিষশাস্ত্রে অসাধারণ অধিকারী হইয়াছিলেন। বহু শিষ্য করিয়া গিয়াছেন তন্মধ্যে বনগ্রাম গরীবপুরের প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কুমার স্বামী একজন অন্যতম। ইনি তান্ত্রিকমঠপ্রবর্ত্তক পর্য্যন্ত হইয়া গিয়াছেন। শাস্ত্রেতো এইরূপ তীক্ষ্ণতা, তাহার উপর আবার এমন স্বভাবশিল্পী ছিলেন যে তাঁহার যৌবনে যখন প্রেসের এত ছড়াছড়ি ছিল না তখন তিনি নিজে কাষ্ঠের টুকরায় অক্ষর খোদাই করিয়া ভাটপাড়ায় এক প্রেস স্থাপন করেন ঐ প্রেসের নাম ছিল মধুকরী প্রেস। মধুকরী নামে এক সংবাদপত্র ঐ প্রেসে ছাপা হইত। ধারণাশক্তির এতই তীক্ষ্ণতা যে ইংরাজী এক বর্ণও না জানিয়া ৺যদুনাথ মুখোপাধ্যায় নামক হুগলির তাৎকালিক অভিজ্ঞ এক ডাক্তারের (ইনি উক্ত কুমার স্বামীর পিতা) নিকট মুখে মুখে শুনিয়া চিকিৎসা কার্য্যে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিলেন এবং বিনা অর্থে গ্রামে চিকিৎসা করিয়া গ্রামের যথেষ্ঠ উপকার করিতেন। ইংরাজী ঔষধের নাম তিনি বাঙ্গালায় লিখিয়া দিয়া প্রেস্কৃপ্সন্‌ করিতেন ও তাহা ডাক্তারগণের সম্মত হইত। তাঁহার আর একটি স্বাভাবিক শক্তি ছিল চিত্রকলায়। কাহারও কাছে শিক্ষা করেন নাই অথচ এমন ছবি আঁকিতেন যে তাঃা দেখিলেই মনে হইত যেন কোন শিক্ষিত চিত্রকরের চিত্রিত। গ্রামের মধ্যে অন্যতম দূর্গোৎসবাদিক্রিয়াবান্‌ এই মধুরোদারচরিত মহাধী যথার্থই একজন সূক্ষ্মবুদ্ধির আদর্শ ছিলেন। ৮৪ বর্ষ বয়সে এই মহাপুরুষের গঙ্গালাভ হয়।
  105. পূর্ণচন্দ্র ঠাকুর

  106. ব্রহ্মচারী ঠাকুরের অন্যতম প্রপৌত্র। শান্ত শিষ্ট ও বংশোচিত গুণসম্পন্ন ছিলেন। শিশু-পুত্র-কন্যা রাখিয়া অকালে ইনি কালগ্রাসে পতিত হন।
  107. উমেশ চন্দ্র ঠাকুর

  108. ইনি ৺কালীনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। খুব সাহসী ও গুরার্চিত গুণগ্রামে ভূষিত ছিলেন। গুরুজনের প্রতি বিশেষ গৌরব রাখিতেন। ইনি রেল হওয়ার পূর্ব্বে জননীর পীড়া নিবন্ধন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার বেলী সাহেবের কাছে কলিকাতায় সপ্তাহে ২ দিন পদব্রজেই যাতায়াত করিতেন। এই কার্য্য তাঁহার দশ ঘণ্টায় নির্ব্বাহ হইত। পাদচারে খুব অভ্যস্ত ছিলেন।
  109. জগদ্রাম ন্যায়রত্ন

  110. ইনি রামচন্দ্র ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র নৈয়ায়িক হন, অকালে লীলা সাঙ্গ হওয়ায় উল্লেখ যোগ্য ঘটনা পাওয়া যায় না। ইঁহার ধারা নাই।
  111. রামনারারণ ঠাকুর

  112. ইনি বিষ্ণু ঠাকুরের পুত্র। নির্বিরোধী শাস্ত্রস্বভাব ব্যক্তি ছিলেন।
  113. যোগেশ চন্দ্র ঠাকুর

  114. ইনি দিগম্বর তর্কসিদ্ধান্তের কনিষ্ঠ পুত্র। একজন পরমোৎসাহী উদ্যোগী পুরুষ ছিলেন। অকালে ইঁহার মৃত্যু হওয়ায় সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হইয়াছে।